স্যামসাং গ্যালাক্সি এ৬ রিভিউ
চাইনিজ ব্র্যান্ড গুলো বাংলাদেশের বাজারে আসার পর থেকেই মাঝারি দামের ফোনের বাজারে স্যামসাং এর জনপ্রিয়তা কমতে শুরু করেছে। তবে সেই জনপ্রিয়তা ধরে রাখতে কাজ করছে সামসাং। তাই তো বাজারে এনেছে স্যামসাং গ্যালাক্সি এ৬।
এক নজরে
বেশ পাতলা ও কম্প্যাক্ট সাইজের সুদর্শন একটি ফোন গ্যালাক্সি এ৬। যাতে আপনি পাচ্ছেন মিউজিকে চমৎকার অভিজ্ঞতার জন্য ডলবাই এটমস, ভালো ব্যাটারি ব্যাকআপ ও ফেস রিকগনিশন।
এর ফেস রিকগনিশন যথেষ্ট দ্রুত কাজ করে। এমনকি চশমা পড়া অবস্থাতেও ভালো ভাবেই আপনার চেহারা চিনতে পারে।
এখন বিশ্বের স্মার্টফোন ব্যবহারকারীদের নজর বেজেলহীন ফোনের দিকে। স্যামসাং গ্যালাক্সি এ৬ পুরোপুরি বেজেলহীন না হলেও এর বেজেল খুবই ছোট।
সামনে পিছনে দুই দিকেই গ্লাস ব্যবহার করাটা এখনকার স্মার্টফোন নির্মাতাদের একটা আসক্তিতে পরিণত হয়েছে। এতে করে ফোন সুদর্শন হলেও বিল্ড কোয়ালিটিতে কিছুটা ঘাটতি দেখা দেয়। তাই ব্যক্তিগত ভাবে আমি মেটাল দিয়ে তৈরি ফোন পছন্দ করি। স্যামসাং গ্যালাক্সি এ৬ এর পেছনের দিকে ব্যবহার করা হয়েছে ম্যাট ফিনিশের মেটাল। যা একে দিয়েছে মজবুত বিল্ড কোয়ালিটি ও হাতের ছাপ না পরার সুবিধা। খারাপ দিকগুলো হল- ফোনটি ওয়াটার প্রুফ না। ফাস্ট চার্জ সুবিধা না থাকায় খুব ধীর গতিতে চার্জ হয়।
কিভাবে কিনবেন, সাথে কি কি পাবেন –
গ্যালাক্সি এ৬ কিনতে পারেন অনলাইনে অথবা সামসাং এর শোরুম থেকে। যেখান থেকেই কিনুন, এই ফোনের জন্য আপনি পাবেন এক বছরের ব্র্যান্ড ওয়ারেন্টি। দেশের বাজারে ফোনটির দাম রাখা হচ্ছে ২৬,০০০ থেকে ২৭,৯০০ টাকা।
এই দামের ভেতরে আপনি পাচ্ছেন ফোন, চার্জার, মাইক্রো ইউএসবি ক্যাবল, ফোন হোল্ডার, সিম ও মেমোরি কার্ড খোলার চাবি এবং স্যামসাং এর সেই পুরনো মডেলের হেডফোন। তাই এই ফোনে ব্যবহৃত ডলবাই এটমস সাউন্ডের মজা নিতে হলে আপনাকে আলাদা করে ভালো মানের হেডফোন কিনতে হবে। কালো, রূপালী-নীল ও সোনালী কালারে ফোনটি বাজারে পাওয়া যাচ্ছে।
ডিসপ্লে
বৈশিষ্ট্য বিশ্লেষণ করতে গেলে প্রথমেই কথা বলতে হয় ডিসপ্লে নিয়ে। স্যামসাং এই ফোনে ব্যবহার করেছে সুপার-এমোলেড স্ক্রিন। যার আকৃতি হচ্ছে ৫.৬। আইফোন ৮ এর থেকে সামান্য বড় এই ডিসপ্লে। যদিও ডিসপ্লেটি স্যামসাং ইনফিনিটি ডিসপ্লে নামেই ডাকছে। তবুও ব্যবহারকারীকে হতাশ হতেই হবে। কারণ এতো বড় ডিসপ্লেতে আপনি দেখতে পাবেন ৭২০পি ইমেজ। যাকে বলা হয় এইচডি। কিন্তু ৫.৬ ইঞ্চি ডিসপ্লে সম্বলিত ২৭,৯০০ টাকা দামের একটা ফোনে আপনি ১০৮০পি বা ফুল এইচডি ইমেজ আশা করতেই পারেন। তার উপর এই ডিসপ্লের পিক্সেল ডেনসিটি মাত্র ২৯৪ পিপিআই যা এই দামে হওয়া উচিত ৩৫০পিপিআই এর বেশি। তবে ডিসপ্লেটির টাচ রেসপন্স খুব ভালো আর মাল্টিটাচের সুবিধা রয়েছে।
সিম, মেমোরি ও অন্যান্য প্যানেল
এই ফোনে আপনি পাচ্ছেন একসাথে ২টি ন্যানো সিম লাগানোর সুযোগ। একটা সিম স্লটের পাশেই রয়েছে ডেডিকেটেড মেমোরি কার্ড স্লট। আশার কথা হচ্ছে এই ফোনে হাইব্রিড স্লট ব্যবহার করা হয়নি। যার ফলে মেমোরি কার্ড লাগানোর জন্য আপনাকে একটা সিম খুলে রাখতে হচ্ছে না। সিম ও মেমোরি স্লট গুলো রয়েছে ফোনটির বাম পাশে। যা খুলতে ব্যাটারি খোলার প্রয়োজন নেই। লাউড স্পিকার রয়েছে ফোনের ডান দিকে। তাই ল্যান্ডস্কেপ মুডে গেম খেলা বা ভিডিও দেখার সময় স্পিকার হাতের নিচে আটকে যাওয়ার সম্ভাবনা নেই। ফোনটি বাজারে এসেছে ২টি সংস্করণে। যার একটির ৬৪ গিগাবাইট ইউজার মেমোরি ও ৪ গিগাবাইট র্যাম। অন্যটির ৩২ গিগাবাইট ইউজার মেমোরি ও ৩ গিগাবাইট র্যাম।
অপারেটিং সিস্টেম ও প্রসেসর
অ্যান্ড্রয়েড ৮.০ (অ্যান্ড্রয়েড ওরিও) অপারেটিং সিস্টেমে পরিচালিত এই ফোনে ব্যবহার করা হয়েছে আট কোর বিশিষ্ট এক্সিনস ৭৮৭০ চিপসেট।
ক্যামেরা
দেশের বাজারে ২০ হাজার টাকার যেকোন ফোনেই বর্তমানে পাওয়া যাচ্ছে ডুয়াল ক্যামেরা ফ্যাসিলিটি। যা দিয়ে আপনি ডিএসএলআর ধাঁচের ছবি তুলতে পারবেন। কিন্তু এই দিক থেকে আপনাকে হতাশ হতে হবে স্যামসাং গ্যালাক্সি এ৬ নিয়ে।
প্রায় ২৮ হাজার টাকা দাম হওয়া সত্যেও এতে ডুয়াল ক্যামেরা দেয়া হয়নি। সামনে পিছনে দুই দিকেই আপনি পাচ্ছেন ১৬ মেগাপিক্সেলের সিঙ্গেল ক্যামেরা এবং দুই দিকেই রয়েছে লেড ফ্ল্যাশের সুবিধা। পেছনের ক্যামেরায় পাচ্ছেন ১০৮০পি @ ৩০এফপিএস ভিডিও রেকর্ডিং সুবিধা। যা এই ফোনের জন্য আরেকটা হতাশাজনক ব্যাপার। এই দামে প্রায় সব কোম্পানি আজকাল 4K ভিডিও রেকর্ডিং এর সুবিধা দিচ্ছে।
ব্যাটারি লাইফ
এ৬ এ ব্যবহার করা হয়েছে ৩০০০ অ্যাম্পায়ারের লিথিয়াম আয়ন ব্যাটারি। এ৬ এর মত এমন বড় সাইজের ফোনে খুব সহজেই ৩৫০০ থেকে ৪০০০ অ্যাম্পায়ারের ব্যাটারি দেয়া যেত। হয়তো স্যামসাং ফোনের ওজন ও পুরুত্ত কমিয়ে রাখার জন্যই ব্যাটারি ব্যাকআপের দিকে তেমন নজর দেয়নি। যেহেতু এতে এক্সিনস ৭৮৭০ অক্টাকোরের মত শক্তিশালী প্রসেসর আর অ্যান্ড্রয়েড ওরিও রয়েছে তাই আশা করা যায় একজন ব্যবহারকারী খুব স্বাচ্ছন্দ্যের সাথেই একবার চার্জ দিয়ে সারাদিন ফোনটি চালাতে পারবেন। তবে যারা থ্রিজি, ফোরজি ব্যবহার করেন, গেম খেলেন তাদের জন্য ব্যাটারিটা হয়তো যথেষ্ট নাও হতে পারে।
মন্তব্য
সবশেষে বলা যায়, যারা ব্র্যান্ড ভেল্যুকে প্রাধান্য দেন তারা এই ফোনটি কোন চিন্তা ছাড়াই কিনতে পারেন। কিন্তু যারা ভেল্যু অব মানিকে প্রাধান্য দেন তারা এই দামে আরো অনেক বেশি ফিচার সমৃদ্ধ ফোন কিনতে পারেন।
– রিভিউ লিখেছেন রেজুয়ার রহমান